Muhammad SAW |Muhammad Religious leader | মুহাম্মদ সাঃ জীবনী
Biography of Muhammad SAW |Muhammad Religious leader | মুহাম্মদ সাঃ জীবনী
পর্ব ১
জন্ম ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা
জন্ম ও পারিপারশ্বিক অবস্থা সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কর্মময় জীবন,The working life of the Prophet Muhammad (peace be upon him).
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্জনে তাঁর ক্রমাগতভাবে অক্লান্ত প্রয়াস এবং সর্বোপরি তৎকালীন বিশ্বে প্রচলিত বহুত্ববাদী ধর্মীও চিন্তা-চেতনায় আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠায় তাঁর আজীবন একনিষ্ঠ সাধনা সদা-সমুজ্জ্বল সূর্যের মত মানুষের কাছে আলােকবত্তিকা হয়ে আছে। আরবের বহুত্বাদী সমাজে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, প্রতিশোধ গ্রহণের দুর্দমনীয় স্পৃহা, বংশ-পরম্পরায় গোত্রীয় অমানবিক আচরণ, লুঠতরাজ, বংশমর্যাদা ও ক্ষমতার গর্ব এবং এ ধরনের আরও অনেক নিন্দনীয় প্রথা ও কাজ ছিল যা তাঁর প্রবর্তিত একত্ববাদী সমাজে ক্রমে ক্রম বিলীন হয়ে গেল।
একত্ববাদী ধারণায় মানুষের অন্তর এক প্রদীপ্ত প্রভায় প্রজ্জবলিত হয়ে মানবতার জয়গানে মুখর হয়ে উঠল। সবাইকে ভ্রাতত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তারা এমন এক শ্রেণীইীন ও আদর্শ সমাজের গোেড়া পত্তন করল, যে সমাজে সং কাজ ও পরার্থে আত্মত্যাগ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাপকাঠি বলে বিবেচিত হল। মানবিক অগ্রগতিতে এ সমাজের অবদান তাই ঐতিহাসিক এবং তা আজ পর্যন্ত মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করছে। নতুন এ সভ্যতার ধারক ও বাহক হলেন মানবজ্াতির সঠিক পথের দিশারী, আদর্শ ও অনুপম চরিত্রের অধিকারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।
বল, আমার সালাত, আমার বন্দেগী ; আমার জীবন, আমার মরণ-সব মর্মেই আমার নিকট আদেশ এসেছে আর আদেশ পালনকারী মুসলিমদের মধ্যে আমিই সর্বাগ্রগামী।
(পবিত্র কুরআন ৬ঃ১৬৩—১৬৪)
পবিত্র কুরআন এই বাণীর স্পষ্ট প্রতিফলন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সামগ্রিক জীবনে আমরা দেখতে পাই। রাখাল ও এতিম হিসেবে, স্বামী, পিতা ও বন্ধু হিসেবে, সওদাগর হিসেবে, হিরা পর্বতে একজন নিঃসঙ্গ সাধক হিসেবে, সমাজ সংস্কারক হিসেবে সেনাপতি ও ন্যায়বিচারক হিসেবে এবং সর্বোপরি একজন নবী হসেবে তিনি এই বাণীর নীতি ও আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হন নাই।
মানবিক গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশে তিনি যে আদর্শ স্থাপন করেন তা সময় ও কালের বিবর্তনে এতটুকু ম্লান হয় নাই । বরং যতই দিন যাচ্ছে, ততই তাঁর আদর্শ বেশি করে মুসলমান অমুসলমান সবার কাছে আদৃত হচ্ছে শ্রদ্ধার সাথে। প্রায় সোয়া চৌদ্দশ বছর আগে তিনি যে আদর্শের প্রদীপশিখা জালিয়ে গেছেন, তা আজ কোটি কোাটি মানুষের মনে প্রজ্ত্বলিত হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। তাঁর মত আর কেউ আজ পর্যন্তি মানুষের সামগ্রিক মানবিক গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ করতে পারেন নাই। হিন্ট্রি অব দা টার্কস পুস্তকে প্রফেসর লা-মার্টিন বলেন ও "দার্শনিক, সুবক্তা, স্বরগীঁয় দূত, আইন প্রণয়নকারী, যান্ধা, বারণায় বশীভূতকারী, যুক্তিপূর্ণ মতবাদের মৃ্তিবিহীন।
ধমীয় প্রথার পুনঃসংস্থাপনকারী, বিশটি আঞ্চলিক সাম্রাজে্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হল মুহাম্মদ (সঃ) । যা দিয়ে মানবীয় মহত্ত্রের পরিমাপ করা চলে তার সকল মানের বিচারেই আমরা যথার্থভাবে এই প্রশ্ন করতে পারি মুহাম্মদ (সঃ)-এর চেয়ে মহত্তর কোন ব্যক্তি কি আছেন?
Is there anyone greater than Muhammad (pbuh)?
মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর দি হান্ড্রেড' পুস্তকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-ক বিশ্বয়কর ও অভৃতপূর্ব কৃতিত্বের অধিকারী একজন মানুষ' হিসেবে গণ্য করে তাঁকে মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বস্তুতঃ সত্যবাদিতা, বদান্যতা, কর্তব্যপরায়ণতা, সহনশীলতা, বিন্ম্রতা, ক্ষমাশীলতা, অতিথিপরায়ণতা এবং অনুরূপ অন্যান্য মানবিক গুণাবলীর জন্য তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে আদৃত, প্রশংসিত ও সম্মানিত।
স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নবী সম্পর্কে বলেন "নিশ্চয় আপনি মহান চারিত্রিক আদর্শের ওপরই কায়ম রয়েছেন । (সুরা,৬৮:৪)
Life History of Prophet Muhammad from birth to death
বিশ্বের মানুষের প্রশংসাধন্য হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্ম (When and where was Muhammad (pbuh) born?) হয় মক্কা নগরীতে, করাইশ গোত্র হাশিম পরিবারে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট অনুযায়ী ৫২ পূর্ব-হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল মাসে। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। পিতামহ আবদুল মুত্তালিব শিশুর নাম রাখেন মুহাম্মদ। জন্মের আগেই এই শিশু পিতহারা হন এবং ৬ বছর বয়সের সময় হারান মাতাকে। অতঃপর পিতামহ আবদুল মুত্তালিবের তত্ত্বধানে
তিনি লালিত-পালিত হতে থাকেন । এতিম এই শিশুকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতন। তাঁর মৃত্যুর পর এই শিশুর দেখা-শােনার ভার পড়ে আবু তালিবের উপর /আবু তালিব ছিলেন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ। আরবের জীবনধারায় সবচেয়ে উত্তম উপায়ে তিনি তার চাচার কাছেই বড় হতে সৌন্দর্য, নৈতিক গুণাবলী ও বিচক্ষণতার জন্য তার মা আমিনার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কুরাইশ গােত্রের এই হাশিম পরিবারটি গরীব হলেও দেশর খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সাথে তাদের যােগাযােগ ছিল। আরবেরযে লােকগুলোার মাঝে মুহাম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করেন, তারা ছিলেন সম্ত্রান্ত লােক।
টমাস কার্লাইল তাঁর হিরােজ এ্যান্ড হিরাে ওয়াশপ গ্রন্থে বলেন ও বংশের উপযুক্ত দেশই বটে। অনতিক্রম্য অগম্য পাথরের পাহাড়, বৃহৎ ও বিস্তা্ণ মরুভূমি, মাঝে মাঝে সবুজ ব্ণের সুন্দর ফালি যেখানে পানি আছে সেখানেই আছে সবুজের সমারোহ, সৌন্দর্য। সুবাসিত ও সুগন্ধিযুক্ত গাছ-গাছড়া, খেজুর গাছ, ধুনা জাতীয় গাছ। বসবাসযােগ্য দু- স্থানের মধ্যে সুবিস্তুত ও পতিত বালুর দিগন্ত, শূন্য, নীরব বালুর সমুদ্রের মত স্থানকে চিন্তা করুন। আপনি সেখানে একা, আর আছে বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড ; দিনের বেলায় সুর্যের কিরণ বালুর ওপর পড়ার ফলে তা অসহ্য হয়ে উঠে।
রাতে সীমাহীন গভীর আকাশে অসংখ্য তারা স্পষ্টি হয়ে ওঠে। এমন একটা দেশ উপযুক্ত। আরব চরিত্রে যা লক্ষ্য করা যায় তাহল অতি বেশি চঞ্চলতা, কর্মঠতা এবং সর্বোপরি অধিক একাগ্রচিত্ততা ও গভীর আগ্রহ। পারসিয়ানদের বলা হয় প্রাচ্যের ফরাসী। আরব জাতিকে আমরা বলব প্রাচ্যের ইতালীয়ান। আরবীয়রা হল মেধাবী ও সম্ত্রান্ত লোেক ; এদের যেমন দুর্দমনীয় গভীরআবু তি আছে, তেমনি আছে এসবের উপর লৌহকঠিন আত্মসংযম যা মহানুভবতা ও মেধার বৈশিষ্ট্যা।
অমার্জিত বেদুইনরা তাদের তাঁবুতে আগত অতিথিকে এমনভাব অভ্যর্থনা জানায় যেন সেখানে যা আছে তার ওপর এ আগন্তুকের অধিকার আছে। ঐ আগন্তুক তার ঘােরতর শত্র হলেও সে তাকে পণুডর শাবক জবাই কর খাওয়াবে, তিনদিন ধরে পবিত্র আতিথেয়তায় তাকে সেবা করবে এবং তারপর তাকে তার গন্তব্য স্থানের পথে যাওয়ার সুযােগ দেবে। তারপর অপর এক আইন অনুযায়ী, যা তাদের কাছে পবিত্র, সম্ভব হলে তাকে হত্যা করবে।কথা ও কাজে তাদের বপরীত্য নেই। তারা বাচাল নয় বরং অল্পভাষী। তারা আন্তরিক ও সত্যপরায়ণ। আমরা যা জানি তাহল, তারা ইহুদীদের জ্ঞাতি কিন্তু যখন তারা কথা বলে তখন তাদেরকে মনে হয় বাগ্মী ও মেধাবী বৈশিষ্ট্য তা তাদের নেই। তাদের চরিত্র মিশে আছে কমনীয়তা ও ঔজ্জ্ুলতা, আরবের লোকদের মধ্যে একটা গুণ প্রকাশমান ছ্িল ; এই গুণটা ছিল একাধিক গুণের উপজাত ফল বা সকল গুণের সেরা ওুণ।
এই গুণকে আমরা বলতে পারি ধার্মিকতা, প্রাচীনকাল যা ইহুদীদের চরিত্রে নেই। থেকে তারা ছিল তাদের ধমীয় বিশ্বাস অনুযায়ী অত্যন্ত আগ্রহী উপাসক সাবেইনদের মত তারা নক্ষত্রকে উপাসনা করত ; এছাড়া তারা প্রকৃতির অনেক বস্তকেও উপাসনা করত। এসব বস্তুকে তারা উপাসনা করত প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা এসব বস্তুর স্রষ্টার প্রতীক হিসেবে-তারা মনে করত প্রকৃতির মধ্যেই প্রকাশমান। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেসব আদর্শস্থানীয় প্রমাণ এই চিন্তাশীল গ্রাম্য লোকদের মনে এক ধরনের ধর্মনিষ্ঠতা ও মহানুভবতা আসন করে নিয়েছিল। এটা কিন্তু সত্যি এক বিস্বয়কর বিষয়।"
"দুই উৎস্গীকৃত ব্যক্তির পুত্র "
The story of the sacrifice of the Prophet Ibrahim (peace be upon him).
হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে বলা হয় দুটো আধ্যাত্রিক ধারার উৎস। এ দুটো ধারা স্বতন্ত্রভাবে প্রবাহিত হয়েছে। তাঁর দুই পুত্র ইসমাইল (আঃ) এবং ইসহাক (আঃ) হলেন এই দুই আধ্যাত্ম্িক ধারা। হযরত ইবরাহীম (আঃ)- এর স্ত্রী হাজেরার গভ জন্মগ্রহণ করেন হযরত ইসমাহল (আঃ) এবং সারাহ- হাজী মাহবুব কাশিম রচিত "Destruction or Peace" গ্রন্থে বিভিন্ন নির্ভরযােগ্য সূত্রের উল্লেখ করে বলা হয় যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) খ্রীষ্টপূর্ব ১৯৪৩ কিংবা ১৯৪২ অব্দে ধর্ম প্রচারের জন্য মিশর গমন করেন এবং সেখানে তিনি এক বছরের বেশ্ সময় অবস্থান করেন।
সে সময় মিশরের সম্রাট ছিলেন সেনুস্রিটি প্রথম। তাঁর স্ত্রীর নাম নিউফ্রিট। তাঁদের প্রথম সন্তানের নাম রাজকুমারী হাজেরা। স্রাট হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্তরী সারাহ-এর কাছে পুত্র সন্তানের জন্য দোওয়া করতে বলেন। কারণ তাঁদের পত্র সন্তান ছিল না। শুধু তাই নয়, সম্রাটের সভাসদগণের অনেকেই ছিলেন শুধু কন্যা সন্তানের জনক। সারাহ সবার জন্য দোওয়া করেন। হুযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং সারাহ যখন মিশর ত্যাগ করেন তথন তার আগেই নয়, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর উপস্থিতিতে মিশরের মারাত্মক খরা পরিস্থিতির অবসান ঘট এবং সর্বত্র বষ্টি হয়। সম্রাট ও সভাসদগণের সবাই ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং সারাহ যখন সম্রাট ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে মিশর ত্যাগ করার জন্য বিদায় নিতে আসেন তখন তাঁরা প্রায় আট বছরের রাজকুমারী হাজেরাকে তাদের হাতে অর্পণ করেন।
তাঁরা মনে করেন যে, তাঁদের ধর্মীয় শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শকের কাছে তাঁদের কন্যা সুথে থাকবে। ইবরাহীম (আঃ) ও সারাহ মিশর ত্যাগ করেন রাজকুমারী হাজেরাকে সাথে নিয়ে। হাজেরার বয়স যখন ষােল বছর পূর্ণ হয় তথন ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। কি্्তু সারাহ তাতে সম্মত হন না। তিনি স্বামী ইবরাহীম (আঃ)-কে অনুরােধ করেন হাজেরাকে বিয়ে করার জন্য। হাজেরার বয়স যখন সতর বছর তখন তাঁর সাথে ইবরাহীম (আঃ)-এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর হাজেরার প্রতি সারাহ ক্ষুর্ধ হয়ে ওঠেন এবং তিনি তাঁর প্রতি রুঢ় আচরণ করেন। এতে হাজেরা ভীত হয়ে পড়েন এবং নিজের পিতার কাছে মিশরে পালিয়ে যা ওয়ার উদ্যাগ নেন। এ সময় হাজেরা এক দুর্লভ সম্মান লাভ করেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে এসে বলেন যে, তাঁর বিষয়ে আল্লাহ ভৃমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর ইবরাহীম (আঃ)-এর গহে ফিরে যাওয়া উচিত। আল্লাহ তাঁর নিরাপত্তা বিধান করবেন। তৌরাত এরস্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়ছে এবং ঐ পুত্রের নাম ইসমাইল রাখার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং দেখা যায় যে, জিবরাঈল (আঃ)-এর কাছ থেক হাজেরা প্রথম মহিলা যিনি স্বগীয় বাণী পান। অতঃপর হাজেরা গৃহে ফিরে যান এবং জিবরাঈল (আঃ)-এর ভবিষযদ্বাণী সম্পর্কে সবাইকে বলেন। সারাহ এতে খুব খুশী হন। কারণ তাঁর কোান সন্তান ছিল না। তিনি হাজেরাকে কোন রকম নির্যাতন থকে বিরত থাকেন। অবশেষে খ্রীষ্টপূর্ব ১৯৩২ অব্দে হাজরা একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন। তাঁর নাম রাখা হয় ইসমাইল । সৌন্দর্যের আধার ইসমাইলকে দেখে সারাহ এত খুশী হন যে, সব সময় তিনি তাকে নিয়ে মেতে থাকেন। কিন্তু এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং সারাহ তাঁর স্বামীকে অনুরোধ করেন যে, তিনি যেন হাজেরা ওশিশু পুত্র কে কোন দূরবর্তী স্হানে রেখে আসেন। এতেইবরাহীম (আঃ) খুবই মর্মাহত হন এবং তিনি আল্লাহর সাহায্য কা করেন।
এ সময় জিবরাঈল (আঃ) তার কাছে এসে বলেন যে, আল্লাহ তাং উচিত যেখানে তারা সারাহ-র কাছ থেকে নিরাপদ থাকবে। কথামত ইবরাহীম (আঃ) উটে করে হাজেরা ও শিশুড ইসমাইলকে নিলেন এবং সাথে খাদ্য ও পানি নিলেন। কেনান থেকে দক্ষিণ দিকে পথ চলার পর তাঁরা মক্কায় এসে উপস্থৃত হন। এথানে হাজেরা তাঁর শিপু পূত্রকে নয়ে উট থেকে অবতরণ করেন এবং ইবরাহীম (আঃ) উটের উপর থেকে খাদ্য ও পানি নামিয়ে দেন। অতঃপর তিনি ফিরতে উদ্যত হলে হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মরুভূমির মাঝে তাঁকে কার জিম্মায় রেখে তিনি ফিরে যাচ্ছেন। ইবরাহীম (আঃ) জবাব দেন যে, আল্লাহর নির্দেশে এবং তাঁরই জিম্মায় রেখে তিনি চলে যাচ্ছেন। ইবরাহীম (আঃ) সামান্য দূরে গিয়ে আল্লাহর কাছে হাজেরা ও শিশু ইসমাইলের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করেন। কয়েকদিন পর খাদ্য ও পানি ফুরিয়ে গেলে হাজেরা পার্শ্বর্তী দুটো। পাহাড়ে সাফা ও মারওয়ায় পানির খােজে ছুটাছুটি করেন । এভাবে সাত বার ছুটাছুটি করার ফলে তিনি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বিনীতভাবে আল্লযাহর কাছে প্রা্থনা করেন। ৎক্ষণাৎ আল্्লাহ তার ডাকে সাড়া দেন এবং জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে এসে জানান যে, ইসমাইলের পায়ের আথাতে বালির মধ্যে পানি সংরক্ষণ করেন।
পানির এই কৃয়া পরিচিত হয় জমজম' হিসেবে, যা এখনও বিদ্যমান। এখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ) মাঝে মাঝে তার পুত্রকে দেখতে আসতেন।
হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স যখন প্রায় নিরানব্বই বছর তখন জিলহজ্জ মাসের আট তারিখের রাতে (খ্রীস্টপূর্ব ১৯১৯ অব্দ) তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, তাঁকে তার একমাত্র পুত্রকে আল্লাহর উদ্দশ্যে কুরবানী করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তিনি এই স্বপ্কে বিশেষ গুরুত্ দিলেন না। পরব্তী রাতে তিনি আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। এবার ও তিনি কোন গুরুত্ দলেন। না। ততীয় রাতে তিনি আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। তিনি ঘুম থেকে উঠে সারাহকে স্বপ্রের কথা বললেন।
অতঃপর তিনি দ্রুততম উটে করে মক্কায় গিয়ে উপস্থিত হলেন ১০ই জিলহজ্জ তারিখে। তিনি ইসমাইলকে সুন্দর পােশাকে সজ্জিত করে দিত বললেন হাজেরাকে। হাজেরা তাই করলেন। তিনি ইসমাইলকে একটা ছুরি ও দড়ি নিয়ে তাঁর সাথে যেতে বললেন। তাঁরা মােনাহ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন। শয়তান বুঝতে পারে যে, ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিদশ পালনে দঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন। এখন সে হাজেরার কাছে এসে বলে যে ইবরাহীম আল্লাহর নির্দেশে ইসমাইলকে কুরবানী করত নিয়ে যাচ্ছে। হাজেরা নির্ভয় বলেন যে, আল্লাহর যা ইচ্ছে তাই হবে। শয়তান ইসমাইলকে ঐ একই কথা বললে সে বলে যে আল্লাহর ইচ্ছা হলে সে তা প্রতিপালনে পিছপা হবে না।
মােনাহ পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে শয়তান ইবরাহীম (আঃ)-কে কুমন্ত্রণা দেয় যে, আল্লাহ তাঁকে পরীক্ষা করছিলেন এবং তিনি তাতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং তাঁর ফিরে যাওয়া উচিত। ইবরাহীম (আঃ) বুঝতে পারেন যে, শয়তান তাঁকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। এ কারণে তিনি সাতটি পাথরের টুকর তুলে শয়তানের দিকে নিক্ষেপ করেন এবং তৎক্ষণাৎ সে পাথরের মৃর্তি হয়ে যায়। এ শয়তানটি জামরাতুল উলা নামে পরিচিত। সামান্য পথ অতিক্রম করার পর শয়তান আবার কুমন্ত্রণা দিলে ইবরাহীম (আঃ) তার প্রতি সাতটি পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেন এবং সেও পাথরের মুর্তি হয়ে যায়। এ শয়তানটি জমরাতুল ওয়াসতা নামে পরিচিত। আরও কিছদূর অতিক্রম করার পর তৃতীয় শয়তান একইভাবে শেষ চেষ্টা করে। ইবরাইহীম (আঃ) একইভাবে তার প্রতি সাতটি পাথরের টুকরা নিক্ষপ করেন এবং সে পাথরের মৃর্তি হয়ে যায়।
এ শয়তানটি জমরাতুল উকবা' নামে পরিচিত। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ তিনটি মােনাহ পাহাড়ের উপরে উঠার পর ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইলকে স্বপ্রের কথা বলেন । ইসমাইল বলেন যে, তিনি যেন আল্লাহর ইচ্ছা পূরণ করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পূত্রকে দড়ি দিয়ে বাধেন। তিনি কাপড় দিয়ে নিজের চোখ বাঁধেন এ কারণে যে, তিনি যেন পুত্রকে না দেখতে পান। তার ফলে তিনি আল্াহর নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকতে পারেন। ইবরাহীম (আঃ) পুত্রকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তিনি দ্বিতীয় বার আঘাত করেন। কিন্তু এবারও তিনি সফল হলেন না। অতঃপর তিনি ততীয় বার আঘাত করে বুঝতে পারলেন যে, এবার তিন সফল হয়েছেন।
চোথ থেকে কাপড় খুলে তিনি অবাক বিস্বয়ে দেখেন যে, ইসমাইল দাড়িয়ে হাসছে এবং এক পাশে একটি ভেডা করবানী হয়েছে। তিনি মনে করলেন যে, আল্লাহর নির্দেশ প্রতিপালিত হয় নাই। তাই তিনি রক্তমাখা ছুরি নিয়ে ইসমাইলকে আঘাত করতে উদ্যত হন।এ সময় জিবরাইল (আঃ) বলে উঠলেন যে, তিনি যেন ইসমাইলবেক আঘাত না করেন। কারণ তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ কথা শোেনার পর ইবরাহীম (আঃ) মোহাবিষ্ট অবস্থায় মা্টিতে পড়ে গিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ঘোষণা করলেন। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। "তথন আমি তাকে বললাম ও "হে ইবরাহীম। তুমি তাে স্বপ্রকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এরপেই খাঁটি বান্দাদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক সুম্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তাকে তার পরিবর্তে দান করলাম এক মহান জবেহর জন্ত্।" (কুরআন ৩৭ ৪ ১০৪-১০৭)।
'মােস্তফা চরিত' গ্র্থ মওলানা আকরম খা বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন যে, পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে হযরত ইবরাহীম (আঃ) যে ভেড়া বলিদান করেছিলেন। তার শিং হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সময় পর্যন্ত ঐ ঘটনার পূর্ণ স্তিস্বরূপ কা বায় সযত্রে রক্ষিত হয়েছিল। জমজম কৃয়ার পাশে কাবাগুহ নির্মাণের স্থান আল্লাহ তাঁকে দেখিয় দেন। কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণের সময় ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল ১৩৩ বছর এবং ইসমাইল (আঃ)-এর বয়স ৪৭ বছর। ফেরেশতারা একাজে তাঁদের সাহায্য করেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ও যখন আমি ইবরাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে আমার সাথে কাউকে শরীক কর না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দও্য়মানদের জন্যে এবং রুক সেজদাকারীদের জন্যে।" (কুরআন ২২ ও ২৬)।
কথিত আছে, নিকটবর্তী আবু কুবায়স পাহাড় থেকে একজন ফেরেশতা একখানি স্বগীয় পাথর এনে তা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে দেন এবং তিনি তা কা'বাগহে স্থাপন করেন। ঐ পাথরখানি স্বর্গ থকে আনার পর ঐ পাহাডেই রাখা হয় । মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী (র)-এর তফসীর 'মাআরেফুল ক্কোরআন এর ভাষ্য বলা হয় যে, ইবরাহীম (আঃ)-এর আগে থেকেই বায়তুল্লাহ বিদ্যমান ছিল। এর প্রথম নির্মাণ অদম (আঃ)-কে পথিবীতে আনার পূর্বে বা সাথে সাথে হয়েছিল । নৃহ (আঃ)-এর তৃফানের সময় বায়তুল্লাহর প্রাচীর উঠিয়ে নে ওয়া হয়েছিল, তবে এর ভিত্তি ও নির্দিষ্ট জায়গা বিদ্যমান ছিুল। হযর ত ইসহাক (আঃ) ও তাঁর উত্তরাধিকারিগণের কিতাব 'আদি গ্রন্থে (The
Book of Genesis) বলা হয় যে, দুই ভাই হিযরত ইসমাইল (আঃ) এবং হযরত ইসহাক (আঃ) একত্রে তাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আাঃ)-কে। হেবরনে কবর দেন। প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম। (আঃ) হললেন দুটো আধ্যাত্মিক ধারার উৎস। এর একটি হল হযরত ইসমাইল মাধ্যমে হযরত ইবরাইীম (আঃ)-এর সাথে হযরত মহাম্মদ (স)এব আধ্যাতিক ধারা বর্তমান থাকায় এ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হলো।
হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশধরদের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধ পাওয়ায় তারা মন্কা উপতযকা ছেড়ে আন্যত্র গিয়ে বসবাস করত গুরু করেন। যাওয়ার সময় তাঁরা এই পবিত্র স্থান থেকে বকিছু পাথর সাথে করে নিয় যান এবং পরম ভক্তি ভরে এসব পাথরকে কেন্দ্র করে নানা প্রথা উত্ভাবন করেন। উপরত্ত, প্রতিবেশী বিধর্মী উপজাতীয়দের প্রভাবে ঐসব পাথরের সাথে সংযুক্ত হয় মূর্তি। কা'বাগৃহ তওয়াফ করতে আসার সময় তারা সাথে করে বিভিন্ন মৃতি আনতে শুরু করে। একতুবাদী ইবাদত এভাবে কলুষিত হয়। হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ইয়েমেনের জুরহুম গাত্রের।
এই জুরহুম গােত্রের লােকেরা মক্কায় আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু তাদের অনাচার চরমে পৌছলে তাদেরকে বিতাড়িত করে হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশধর খুজায়া গোেষ্ঠী (এরাও ইয়েমেন থেকে আগমন করে) মক্কার ভার গ্রহণ করে। তাদের এক নেতা সিরিয়া থেকে ফেরার সময় মােবাইটদের কাছ থেকে হুবল' নামের একটি মূর্তি নিয়ে আসে এবং তা কা বাগৃহে স্থযাপন করে। হযেরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের মধ্যে অপর এক শক্তিশালী আরব বংশের নাম হল কুরাইশ এবং এ বংশের কুশাই নামক এক ব্যক্তি খুজা য়া গোত্রের প্রধান হুলায়লের কন্যাকে বিয়ে করেন। হুলায়লের মত্যুর পর কুশাই মক্ার নেতত্ব গ্রহণ করেন। এই কুশাই-এর একজন অধচ্স্তন বংশধর হলেন আবদুল মুত্তালিব হ্যরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পিতামহ।
মুত্তালিব প্রার্থনা করেন, তাঁকে যদি দশটি পুত্র সন্তান দেওয়া হয় তাহলে তিনি একটি পুত্র সন্তান কা বায় আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন। কালক্রমে তিনি দশটি পূত্র সন্তানের জনক হন । কিন্তু তিনি তাঁর প্রতিত্ার কথা বিস্বত হন নাই। তিনি তাঁর পুত্রদের ডেকে তাদের কাছে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা বলেন। তৎকালে মক্কায় প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পর দেখা গেল, লটারীতে আবদুল্লাহর নাম উঠেছে উৎসর্গ করার জন্য। ছােট ছেলে আবদুল্লাহকে আবদুল মুত্তালিব গভীরভাবে ম্বেহ করতেন। আবদুল্লাহ ছিলেন অপূর্ব সৌ्দর্যের অধিকারী। আবদুল্লাহর মাতার নাম ফাতিমা। তিনি ছিলেন তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যার জননী। তাঁর পূত্রদের নাম হল ও জুবায়ের, আবু তালিব এবং আবদুল্লাহ। মাখজুম গােত্রের প্রধান মুগিরা প্রস্তাব করেন যে, পুত্রের পরিবর্তে অন্য কিছু উৎসর্গ করা হােক এবং তাঁর এই প্রস্তাব উপপস্থত সবাই, এমনকি আবদুল মুত্তালিবের অন্যান্য পুত্ররাও সম্থনি করে।
অবশেষে ইয়াছরিবে একজন জ্ঞনী মহিলার পরামর্শত্রম আবদুল্লাহর পরিবর্তে ১০০ উট উৎসর্গ করা হয়।এই আব্দুল্লাহ হলেন মুহাম্মদ সাঃ এর পিতা। পরবর্তীকালে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বলিরুপে উৎসগীকৃত দু'জন ব্যক্তির পুত্র।" তিনি হযরত ইসমাইল (আ) এবং স্বীয় পিতা আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে একথা বলেছিলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। পুত্র আবদুল্লাহকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আবদুল মুত্তালিব সিদ্ধান্ত নিলেন। কুশাই-এর ভাই জুহরা এবং জুহরার প্রপৌত্র ওহাব-এর কন্যা আমিনা। ওহাব ছিলেন জুহরা গােত্রের প্রধান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভতাই উহায়েব ঐ গােত্রের প্রধান হন এবং পিতহীনা আমিনা তাঁর চাচার কাছে লালিত-পালিত হতে থাকেন। এই আমিনাকে আবদুল মুত্তালিব পুত্রবধু হিসেবে পছ্দ করেন এবং ৫৬৯ খ্রীষ্টা্দে আবদুল্লাহর সাথে আমিনার বিয়ে সম্পাদিত হয়। আবদুল্লাহর সাথে আমিনার বিয়ে সম্পর্কে আর একটি ঘটনার কথা জানা যায়। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। হাজী মাহবুব কাশিম তাঁর
Destruction or Peace' গ্রন্থে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর পূর্বে নবী ছিলেন নবী জাকারিয়ার পুত্র জন (Prophet John)। তাকে ইহুদী রাজা হে রড হত্যা করে। জন-এর অনুসারীরা তাঁকে সমাধিস্থ করে। তাঁরা তাঁর কাপড়ে লেগে যাওয়া রক্ত ধােয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রক্তের দাগ নিরশ্চিহ্ হল না। হযরত ঈসা (আঃ) নবী জন-এর একজন শিষ্য। তারা সবাই হযরত ঈসা (আ)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করে। হযরত ঈসা (আঃ) বলেন যে, প্রতিশ্রত নবীর পিতা যেদিন জন্ুগ্রহণ করবেন তার আগে ঐ কাপড় থেকে রক্তের দাগ নিশ্চিহ্ হবে না। ঐ দিনই কাপড় থেকে রক্তের দাগ মুছে যাবে এবং কাপড় সাদা হয়ে যাবে।
মুহাম্মদ (সঃ)-এর পিতা আবদুল্লাহ যেদিন জন্যগ্রহণ করেন সেদিন সিরিয়ার প্রবীণ ইহুদীরা লক্ষ্য করে যে, সংরক্ষিত ঐ কাপড় থেকে রক্তের দাগ মুছে তা সাদা হয়ে গেছে। এরপর প্যালেন্টাইন ও সিরিয়া থেকে কিছু লােক মর্ধায় আসে এবং সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিওু সম্পর্ক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা আবদুল্লাহর কপালে নূর-এ-মুহাম্মদী লক্ষ্য করে বলে যে, প্রতিশ্রত নবীর পিতা হল আবদুল্লাহ। নবীগণকে হত্যা করার ব্যাপারে ইহুদীদের বদনাম ছিল। তারা আবদুল্লাহকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে নব্বই জন সশস্ত্র লোককে মন্ধায় প্রেরণ করে। এ ঘটনা ঘটে আবদুরলাহর বিয়ের পূর্বে। প্রতিশ্রত নবী যেন জনুগ্রহণ করতে না পারে তার জন্যই তাদের এই প্রয়াস ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নবী ইসহাক- এর পুত্রদের মধ্য থেকেই নবী আসুক, ইসমাইল-এর ুত্রদের মধ্য থেকে যেন নবী না অসতে পারে। একদিন আবদুল্লাহ মর্ধার পার্বর্তী এলাকায় শিকারে বেরিয়েছিল ।
দূর থেকে ওহাব দেখে যে, বেশ কিছু সশন্ত্র লােক আবদুল্লাহকে ঘিরে ফেলেছে। ওহাব ও তার লোেকেরা আবদুল্লাহকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তথू তারা নিকটবতী হওয়ার আগেই দেখতে পায় যে, আকাশ থেকে বহু ঘোেড়সওয়ার এসে ঐ নব্বই জনকে হত্যা করে ফেলেছে। ওহাব এগয়ে আবদুল্লাহর কাছে যায় এবং তাকে সাথে করে তার পিতা আবদুল মুত্তালিবের কাছে তাকে নিয়ে যায়। সে সব ঘটনা বর্ণনা করে স্বীয় কন্যা আমিনার সাথে আবদুল্লাহর বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেই অনুযায়ী আবদুল্লাহর সাথে আমিনার বিয়ে সম্পন্ন হয় । বিয়ের রাতেই আবদুল্লাহর কপাল থেকে নূর-এ-মুহাম্মদী' আমিনার কপালে চলে যায়। অনুরূপ এক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন মার্টিন লিংগস তাঁর 'মুহাম্মদ (সঃ)" গ্রন্থ। তিনি অবশ্য বলেছেন যে, আমিনার পিতা ওহাব জীবিত ছিলেন না, ওহাব-এর ভাই উহায়ব-এর কাছে লালিত-পালিত হন আমিনা। মার্টিন।
লিংগস বলেন যে, আমিনাকে বিয়ে করতে যাওয়ার পথে ওয়ারাকার বোন কাতিলা আবদুল্লাহকে দেখতে পান। তিনি আবদুল্লাহর মুখমন্ডলে এক অভৃতপূর্ব আলােকচ্ছটা দেখতে পান। তিনি এতটাই বিমু্ধ হয়ে যান আবদুল্লাহকে তিনি বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু আবদুল্লাহ তাঁর কথার জবাব দেন এই বলে যে, তিনি তাঁর পিতার সাথে আছেন। আমিনার সাথে বিয়ের পর আবদুল্লাহ কয়েক দিন উহায়ব-এর গৃহে থাকেন এবং কোন কাজে একই পথে ফেরার সময় কাতিলার সাথে তাঁর আবার দেখা হয়। কাতিলা তাঁর মুখের দিকে একাগ্রচিত্তে তাকিয়ে থাকেন। কিত্ত্র কোন কথা বলেন নাই । কাতিলা কয়েক দিন আগে যা বলেছিলেন এখন তা বলছেন না একথা আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ও "আগে আপনার সাথে যে আলাো ছিল এখন তা নেই। আপনার কাছে আমার যে প্রয়ােজন ছিল এখন তা আর আপনি মিটাতে পারবেন না।"
"আবরাহার ঘটনা"
(The incident of Abrahah).
আবদুল্লাহ ও আমিনার মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বছর ম্কায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হয়। এই ঘটনাটি হল আবরাহা ক্তৃক কা বাগুহ ধবংস করার ব্যর্থ প্রয়াস । ইয়েমেনে আবিসিনীয় সম্রাটের প্রতিনিধি আবরাহা রাজধানী সানা শহরে একটি মর্যাদাপূর্ণ গীর্জা তৈরি করে। মক্কার কা বাগহের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানকে অতিক্রম করে সানায় গীর্জা প্রতিষ্ঠা এবং কা বার পরিবর্তে ঐ গীর্জাকে জনগণের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। হেযায ও নযদ-এ একথা প্রচারিত হওয়ার পর কিনানাহ গাোত্রের একজন লোক গােপনে সানা-য় গিয়ে ঐ গীর্জা বিকৃত করে। বিষয়টা জানার পর আবরাহা কা বাগৃহকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
হস্তীসহ এক বিরাট বাহিনী নিয়ে আবরাহা মক্কার পথে যাত্রা করে এবং মর্কার নিকটব্তী মুঘাম্মিস নামক এক স্থানে এসে শিবির স্থাপন করে। এখান থেকে আবরাহা ঘোড়সওয়ার বাহিনীকে মক্কার শহরতলীর দিকে প্রেরণ করে। পথিমধ্যে যা পায় তা-ই এই বাহিনী লুঠ করে এবং লুষ্থিত দ্রব্য আবরাহার কাছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবদুল মুত্তালিব-এর দুই শত উটও ছিল। এ ঘটনার পর মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে। আবরাহাকে প্রতিরোধ করা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে আবরাহা তাদের কাছে দূত প্রেরণ করে জানায় যে যুদ্ধ নয়, কা'বাগৃহ ধ্বংস করাই তার উদ্দেশ্য। আলােচনার জন্য সে মক্কার নেতৃস্থানীয় লোকদের ডেকে পাঠায়। আবদুল মুত্তালিব তাঁর এক পুত্রকে সাথে নিয়ে ঐ দূতের সাথে অবরাহার শিবিরে গিয়ে উপনীত হয়। আবদুল মুত্তালিব কোন অনুগ্রহ আবরাহার কাছে চায়। কিনা একথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন ৪ "আপনার সৈন্য বাহিনী আমার দুই শ' উট নিয়ে এসেছে। এগুলো আমাকে ফেরত দিয় দিন।" এ কথা গুনে আবরাহা অবাক হয়ে যায় ।
সে মন্তব্য করে যে, আবরাহা যে তার বাহিনী নিয়ে কা'বাগুহ ধ্বংস করতে এসেছে একথা আবদুল মুক্তালিব। জানা সত্তও সে তার ধর্ম রক্ষার কোন অনুরোেধ না জানিয়ে নিজের উট ফেরত দে ওয়ার অনুরোধ জানাল । এ মন্তব্যের জবাবে আবদুল মুত্তালিব জানালেন ঃ "আমি আমার উটগুলোর মালিক। কা'বাগহের মালিক একজন আছেন এবং তিনিই তা রক্ষা করবেন।" আবরাহা অবশ্য তাঁর উটগুলো ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদের মাঝে ফিরে গিয়ে তাদেরকে পর্বতে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেন। এরপর তিনি কা বাগুহে গিয় প্রার্থনা করন ও "ওহে অতঃপর তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পর্বতে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু আবরাহা কা'বাগুহ ধ্বংস করতে পারে নাই বরং সে নিজেই ধংস হয়ে যায়। মক্কায় আক্রমণ পরিচালনার উদ্দেশ্যে তাদের প্রথম প্রয়াস ব্যর্থ হয়।
কারণ, সামনের দিকে যাওয়ার পরিবর্ত হাতি মাটিতে বসে পড়ে। আকশ্বিকভাবে তারা মাথার উপর অসংখ্য পাথি দেখতে পায়এসব পাখির ঠোট ও দুই পায়ে ছিল নুড়ি পাথর। এসব পাথর তারা নিক্ষেপ করে সৈন্যদের মাথার উপর। এতে অনেক সৈন্য ঘটনাস্থলে এবং অনেক সৈসন্য সানায় ফেরার পথে নিহত হয়। আবরাহা নিজেও সানায় ফেরার পর মারা যায়। এ ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনেও ইনঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। "আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হ্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন ? করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল। আঅতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।" (সুরাঃ ১০৫ঃ১—৫)
আবদুল মুত্তালিবের পত্রে আবদুল্লাহ এই ঘটনার সময় মক্ধায় ছিলেন না। বাণিজ্য উপলক্ষ্যে তিনি একটা বণিক দলের সাথে এ সময় প্যালেস্টাইন ও সিরিয়া যান। ফেরার পথে তিনি ইয়াছরিবে তাঁর মাতামহীর পরিবারের গৃহে যান এবং সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানেই আবদুল্লাহর মৃত্যু ঘটে। এ সংবাদ মন্কায় পাওয়ার পর সবাই শোেকে মুহ্যহান হয়ে পড়ে । একটা বিষয় স্বরণ করে আমিনা সান্ত্না খুঁজে পান। এ সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সন্তান প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসার সময় তিনি একদিন একটা আওয়াজ শুনত পান। "তুমি জনগণের নেতাকে গর্ভে ধারণ করে আছ। সে জন্মগ্রহণ করলে তুমি বলবে ও সবার অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমি তাক একক সত্ত্র কাছে সম্পণ করলাম ; আর তার নাম রাখবে মুহাম্মদ" আমিনা তাঁর চাচার বাড়িতেতই ছিলেন। সন্তান জনুগ্রহণের কয়েক। সপ্তাহ পর তিনি আবদুল মুত্তালিবকে সংবাদ পাঠান তাঁর পৌত্রকে দেখার জন্য। আবদুল মুত্তালিব ছোেট এই শিশুকে কোলে করে কা বাগহে নিয়ে যান এবং আল্লাহর কাছে গুকরিয়া আদায় করেন ।
পরবর্তী পর্ব গুলো দ্রুত পোস্ট করা হবে, ইনশাআল্লাহ।