রমজান মাসের ৩০ আমল | রমজান মাসের ফজিলত | Ramadan Amol

 রমজান মাসের ৩০ আমল | রমজান মাসের ফজিলত | Ramadan Amol



রমজান মাসের ফজিলত 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد


المرسلين محمد وآله وأصحابه أجمعين أما بعد : রমাদান মাস আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ নিয়ামাত। রমাদান সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমাদান মাস রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস। আলকুরআনে এসেছে,


اشَهُرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ


وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ)


অর্থ: "রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।”


[সূরা আলবাকারাহ: ১৮৫)


রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ »


অর্থ: "রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস সিয়াম পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহাকল্যাণ হতে)।" [সুনান আততিরমিযি ৬৮৩, সহীহ। এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো


পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো: 


এক.

ইখলাস অর্থাৎ একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম- খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শিরকে রূপান্তরিত হতে পারে। আলকুরআনে এসেছে,


(وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الَّذِينَ


অর্থ : "আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া


حُنَفَاءَ )

হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।" [সূরা আলবাইয়্যেনাহ : ৫] কেননা হাদীসে এসেছে,


« إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا


وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ » অর্থ : “আল্লাহ তা'আলা শুধু সে আমলই কবুল করেন যা শুধু কেবল ইখলাছের সাথে আল্লাহকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়।" [সুনান নাসাঈ ৪৩৩৩, হাসান সহীহ]

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)

দুই.

ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ 

নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে,


(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ)


অর্থ : "এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।" [সূরা হাশর: ৭] এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَةٌ »


অর্থ : “যে এমন ইবাদাত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম: ৪৫৯০]


রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

রমজান মাসের ৩০ আমল | রমজান মাসের ফজিলত | Ramadan Amol 


[১] সিয়াম পালন করা ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরয। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,


) فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ )


অর্থ : “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।" [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫] সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا


تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ »


অর্থ : “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ

একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” [সহীহ বুখারী: ২০১৪]


«مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا»


অর্থ : “যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন।" [সহীহ মুসলিম: ২৭৬৭]


[২] সময় মত সালাত আদায় করা

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)


সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত সালাত আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,


) إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا )


অর্থ : "নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।" [সূরা নিসা: ১০৩] এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,


«عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَقْرَبُ إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى مَوَاقِيتِهَا»


অর্থ : "আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত সালাত আদায় করা।" [সহীহ মুসলিম: ২৬৩]


[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা

 রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর


কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,


( اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ )


অর্থ : "পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।"


[সূরা আলাক : ১]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ وَاتْلُوهُ »


অর্থ : "তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর।” [মুসনাদ আলজামি: ৯৮৯০]


[৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো


রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»


অর্থ: "তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে কুরআন শিক্ষা দেয়।" [সহীহ আলবুখারী: ৫০২৭] «مَنْ عَلَّمَ آيَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، كَانَ لَهُ ثَوَابُهَامَا تُلِيَتْ»


অর্থ: "যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে।"


[সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আননবুবিয়‍্যাহ: ০৭)

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)



[৫] সাহরী খাওয়া


সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে,


السُّحُورُ أَكْلَةٌ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جَرْعَةً مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّ اللَّهَ وَمَلَابِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَىا لْمُتَسَخِرِينَ»


অর্থ : "সাহরী হল বরকতময়। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।” [মুসনাদ আহামদ: ১১১০১, সহীহ]


[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া


সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। এটি একটি ফযিলাতপূর্ণ আমল। তবে তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে, مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا


تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

অর্থ : “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” [সহীহ আলবুখারী : ২০০৯] তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে, «إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ


قِيَامُ لَيْلَةٌ »


অর্থ : “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে।” [সুনান আবূ দাউদ: ১৩৭৭, সহীহ]


[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা 

এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম আমল হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা।


হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا ، لَا أَقُولُ الْمِ حَرْفٌ ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»


অর্থ : “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম- মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।" [সুনান আততিরমিযি : ২৯১০, সহীহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না।


আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ وَلَا صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شَهْرًا


كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ».


অর্থ: "রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে কিংবা ভোের অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস সিয়াম পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি।" [সহীহ মুসলিম: ১৭৭৩]


[৮] শুকরিয়া আদায় করা


রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা'আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,

) وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ

وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ )


অর্থ : "আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।" [সূরা আলবাকারাহ: ১৮৫]


( وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَبِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَبِنْ كَفَرْتُمْ

إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ )


অর্থ : "আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, 'যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন'।" (সূরা ইবরাহীম : ৭]


আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন,

«الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ »


অর্থাৎ "সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।" [সুনান আততিরমীযি: ২৭৩৮, সহীহ

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)


[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা


এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ »


অর্থ: "এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের


(১৭)

অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তা'আলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।"


[সুনান আততিরমিযী: ৬৮৪, সহীহ)


[১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া


রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফযিলাত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ »


১৮

অর্থ : "ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।" [সহীহ মুসলিম: ২৮১২।


[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা


এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা • করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে,


1


«كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ»


অর্থ : "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম


১৯

ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত।" [সহীহ আলবুখারী: ১৯০২। গুনাহ মাফ করানোর জন্য অন্যতম আমল হলো সদাকাহ করা। হাদীসে এসেছে,


الصَّدَقَةُ تُطْفِي الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ »


অর্থ: "সদাকাহ গুনাহগুলোকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেমনিভাবে পানি আগুনকে মিটিয়ে দেয়।” [সহীহ আত- তারগীব ওয়াততাহযীব : ৮৬৬]


[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা


রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে


২০

হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَالصِّيَامُ جُنَّةً فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُتُ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَسْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ


فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَابِمٌ» । অর্থ : “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সিমায় পালন করে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। সিয়াম পালন করা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী।" [সহীহ মুসলিম: ১১৫১]


 [১৩] ইতিকাফ করা

 ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দু'আ, * ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ

ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ

فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا»


অর্থ : "প্রত্যেক রমাদানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমাদানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন।" [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪] দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাত।

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)



[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা


রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ।


এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি * করা। আলকুরআনের ঘোষণা,


( وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ )


অর্থ: "ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম।” [সূরা হা- মীম সাজদাহ : ৩৩। হাদীসে এসেছে,


«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ»


অর্থ : "ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে।” [সুনান আততিরমীযি: ২৬৭০]


প্রত্যেক উম্মাতের প্রতি এ কাজের নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةٌ »


অর্থ : 'একটি বাণী হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও'। সহীহ বুখারী: ৩৪৬১)


[১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা


এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


قَالَ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً مَعِي»


অর্থ : "রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য।" [সহীহ আলবুখারী: ১৮৬৩]


২৪

الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءً إِلَّا الْجَنَّةُ »


অর্থ: "এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর ' হাজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।” [সহীহ বুখারী: ১৭৭৩]


[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আলকুরআনের ঘোষণা, ( لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ )



অর্থ: "কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” [সূরা কদর : ৪

হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


২৫

«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا


تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».


অর্থ: "যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” [সহীহ আলবুখারী: ৩৫] এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ في


الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لَا يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ» অর্থ : "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমাদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।" [সহীহ মুসলিম: ১১৭৫]

[১৭] বেশি বেশি দুআ ও কান্নাকাটি করা


দু'আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দু'আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে,


«إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ


كُلِّ لَيْلَةٍ»


অর্থ : "ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।"। আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩)


«إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عُتَقَاء فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَإِنَّهُ لِكُلِّ مُسْلِمٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ دَعْوَةٍ مُسْتَجَابَة»


অর্থ : "রমাদানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা'আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দু'আ কবুল করা হয়।” [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ১০০২]

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)



(২৭)

[১৮] ইফতার করা


সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফযিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা। কেননা হাদীসে এসেছে,


إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَابِمًا فَلْيُفْطِرْ عَلَى التَّمْرِ فَإِنْ لَمْ


يَجِدِ التَّمْرَ فَعَلَى الْمَاءِ فَإِنَّ الْمَاءَ طَهُورٌ »


অর্থ: "যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।” [সুনান আবু দাউদ: ২৩৫৭, সহীহ।


এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:


لِلصَّابِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ)


অর্থ: সিয়াম পালনকারীর জন্য দু'টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে: একটি হল ইফতারের সময়, আর


(২৮)

দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। [সহীহ মুসলিম: ২৭৬৩)


[১৯] ইফতার করানো


অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে,


«مَنْ فَطَرَ صَابِرًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ ، مِنْ غَيْرِ أَنْ


يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٍ. »


অর্থ: "যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে


না।" [সুনান ইবন মাজাহ: ১৭৪৬, সহীহ]


[২০] তাওবাহ করা


তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশি হন। আলকুরআনে এসেছে,


(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ


جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ)


অর্থ : “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর, খাটি তাওবাহ; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।" (সূরা আততাহরীম : ৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


৩০

يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ


إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ »


অর্থ : “হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।"


[সহীহ মুসলিম: ৭০৩৪]


গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার অন্যতম আমল হলো তাওবাহ করা। কেননা হাদীসে এসেছে,


التَّابِبُ مِنَ الذَّنْبِ ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ»


অর্থ : " তাওবাহকারী গুনাহ থেকে এমনভাবে ফিরে আসে যে, তাওবাহ করার পর আর কোন গুনাহই তার


থাকে না (সুনান ইবন মাজাহ: ৪২৫০।

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)




[২১] তাকওয়া অর্জন করা


তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে,


(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ )


অর্থ: "হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।" (সূরা আলবাকারাহ: ১৮৩]


) وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا )


অর্থ : "যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।" (সূরা তালাক : ০২]


[২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা

এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرٍ حَجَةٍ وَعُمْرَةٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :


تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ »


অর্থ : “যে ব্যক্তি ফজর জামায়াত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমরাহ করার প্রতিদান পাবে।" [সুনান আততিরমীযি: ৫৮৬, হাসান।


[২৩] ফিতরাহ দেয়া 

এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,

 

أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ


خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ.»


অর্থ : "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে ফিতরাহ আদায় করার


আদেশ দিলেন।" [সহীহ আলবুখারী: ১৫০৩] ঈমানদার গরীব লোকের মনে কষ্ট থাকে যে, তারা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। আর এই ফিতরাহ দেয়ার মাধ্যমে গরীব মানুষের কষ্ট দূর হয় এবং তারাও অন্যান্যদের মত ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


مَنْ نَفْسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفْسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ »


অর্থ: "যে ঈমানদার ব্যক্তির দুনিয়ার কোন কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা'আলা তার কিয়ামতের দিনের কষ্ট দূর করে দিবেন"। সহীহ মুসলিম: ৭০২৮]


[২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো


রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ। কুরআনে এসেছে,


) وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا )


অর্থ: "তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।" [সূরা আদদাহর: ০৮। এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে,


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الإِسْلَامِ خَيْرٌ

قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ ،


وَمَنْ لَمْ تَعْرِفُ» অর্থ : "আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।” [সহীহ আলবুখারী: ১২] অপর বর্ণনায় সাহাবী আবু দাউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,


أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ


ثِمَارِ الْجَنَّةِ »


অর্থ: "যে কোন ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।" [শুয়াবুল ইমান: ৩০৯৮, হাসান]


[২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা


আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন,


( وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ


عَلَيْكُمْ رَقِيباً )


অর্থ: "আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (সূরা আননিসা: ০১। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " بُلُّوا أَرْحَامَكُمْ وَلَوْ بِالسَّلَامِ »


অর্থ : "আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর।" [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আননববিয়্যাহ : ১৩]


[২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা


কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা'আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে ( إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ )


অর্থ : "নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী।" (সূরা আলহিজর: ০৯]


যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস


রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلٌ كَمَا كُنْتَ


تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا »


অর্থ : "কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হয়।" [সুনান আততিরমিযী: ২৯১৪, সহীহ]


[২৭] আল্লাহর যিকির করা


এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা। সময় পেলেই


سبحان الله، الحمد لله، لا إله إلا الله، الله أكبر


পড়া। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


«إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى مِنَ الْكَلَامِ أَرْبَعًا : سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ ، فَمَنْ قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ ، كُتِبَ لَهُ عِشْرُونَ حَسَنَةً ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عِشْرُونَ سَيِّئَةً ، وَمَنْ قَالَ : اللَّهُ أَكْبَرُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ كُتِبَ لَهُ ثَلَاثُونَ حَسَنَةً وَحُطَّتْ عَنْهُ ثَلَاثُونَ سَيِّئَةٌ»


অর্থ: "আল্লাহ তা'আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো


سبحان الله، احمد لله، لا إله إلا الله، الله أكبر


যে ব্যক্তি سبحان الله পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি الله أكبر পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি لا إله إلا الله পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে


الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।" [মুসনাদ আহমাদ: ১১৩৪৫, সহীহ]

(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)





[২৮] দীন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া


আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীন হলো ইসলাম। আর রমাদান মাসে দীন-ইসলামের পরিচয়, গুরুত্বপূর্ণ মাসাআলা-মাসায়েল শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া অন্যতম ফযিলাতপূর্ণ আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি


ওয়াসাল্লাম রমাদান মাসে সাহাবীদেরকে দীন শিক্ষার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। দীন শিক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেছেন,


طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةً عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ »


অর্থ : প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয।" [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪।


দীন শিক্ষার পথে থাকলে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে


«مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا ، سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ »


অর্থ: যে ব্যক্তি দীন শিক্ষা অর্জনে বের হয়, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথকে সহজ করে দেন। [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৩/

[২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো


রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَهِ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنَ »


অর্থ : "জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন।" [সহীহ আলবুখারী: ১৯০২] ইবনে হাজার রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, জিবরাঈল প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমাদান হতে অন্য রমাদান অবধি যা


নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়, সে বছর তিনি দু'বার শোনান ও শোনেন।"


[ফাতহুল বারি: খ- ১. পৃষ্ঠা: ৪২]


[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা


কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ


دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ )


অর্থ: "তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা


সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।" [সূরা আল-আ'রাফ: ৩] কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,


كُنَّا نَتَعَلَّمُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ آيَاتٍ فَمَا نَعْلَمُ الْعَشْرَ الَّتِي بَعْدَهُنَّ حَتَّى نَتَعَلَّمَ مَا أُنْزِلَ فِي هَذِهِ الْعَشْرِ مِنَ الْعَمَلِ »


অর্থ "আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি : ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম।" (শরহে মুশকিলুল আছার: ১৪৫০]



* যা করণীয় নয়


রমাদান মাসের ফযিলাত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:


১. বিলম্বে ইফতার করা


২. সাহরী না খাওয়া


৩. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা


৪. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা


৫. অপচয় ও অপব্যয় করা


৬. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা


৭. জামায়াতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা


৮. বেশি বেশি খাওয়া


৯. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা


১০. বেশি বেশি ঘুমানো


১১. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য


১২. অশ্লীল ছবি ও নাটক দেখা


১৩. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা


১৪. বিদআত করা


১৫. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা


(রমজান মাসের ৩০ আমল, রমজান মাসের ফজিলত, Ramadan Amol, রমজান মাসে কি করা জাবে না, রমজান হাদিস,কোরআন ও রোজা, ramadan,ramadan amol,ramadan 30 amol.)



প্রিয় পাঠক!


রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে। কেননা হাদীসে এসেছে,


وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَتَى عَلَيْهِ شَهْرُ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ ،


وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ »


অর্থ: "যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক।" (শারহুস সুন্নাহ: ৬৮৯, সহীহ। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফযিলাত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমীন!


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন:


« ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ»


অর্থ: "পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।" [সুনান আবু দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]


«اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ »


অর্থ : "হে আল্লাহ! তোমার জন্য সিয়াম পালন করেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।" [সুনান আবু দাউদ: ২৩৫৮, দুর্বল।

Next Post Previous Post

Featured Posts